শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

বিমানের স্ক্রু ঢিলা মানুষের কারণেই হয়েছে: হাসিনা

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ৯, ২০১৬
news-image

হাঙ্গেরি সফরের সময় বিমানে যে যান্ত্রিক সমস‌্যার জন‌্য জরুরি অবতরণে বাধ‌্য হয়েছিলেন, তার পেছনে মনুষ‌্যসৃষ্ট কারণের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

প্রধানমন্ত্রীর বিমানে সঙ্কট: মানবসৃষ্ট কারণটি নাশকতা কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে
তিনি বৃহস্পতিবার সংসদে বলেছেন, “বিমানের স্ক্রু ঢিলার ঘটনা ঘটেছে। বোয়িং কোম্পানির কাছ থেকে আমরা তথ্য নিয়েছি। তারা বলেছে, তাদের ছয় হাজার প্লে­ন বিশ্বব্যাপী চলছে। এ ধরনের ঘটনা আজ পর্যন্ত কোথাও ঘটেনি।

“কাজেই সন্দেহ করা হয়, এটা কোনো টেকনিক্যাল ব্যাপার নয়, এটা মানুষ্য সৃষ্ট। যে কোনোভাবেই হোক, কোনো মানুষের দ্বারা এটা করা হয়েছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।”

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গত ২৭ নভেম্বর বুদাপেস্টের পথে রওনা হওয়া বিমানের বোয়িং উড়োজাহাজ ‘রাঙা প্রভাত’ ওড়ার চার ঘণ্টা পর তুর্কমেনিস্তানের রাজধানী আশখাবাতে জরুরি অবতরণে বাধ‌্য হয়। মেরামতের পর ওই বিমানেই বুদাপেস্ট যান তিনি।

সরকার প্রধান শেখ হাসিনার বিমানের ওই ঘটনা নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছে। দলীয় সভানেত্রীর প্রাণ বেঁচে যাওয়ায় আওয়ামী লীগ সারাদেশে দোয়া মাহফিলও করেছে।

এই ঘটনা তদন্তে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, প্রাথমিকভাবে ছয় কর্মকর্তাকে বরখাস্তও করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সেদিন উড়োজাহাজটিতে জ্বালানি বা ফুয়েলের কোনো সমস‌্যা ছিল না, ইঞ্জিন অয়েল বা লুব্রিক‌্যান্টের ট‌্যাংকের একটি নাট ঢিলা হয়ে গিয়েছিল।

উড়োজাহাজের এই ‘বি’ নাটটি ঢিলা (লাল পাইপের) পাওয়া গিয়েছিল; পাশের অয়েল সেন্সর লাইনে (কালো পাইপ) কাজ হয়েছিল তার কয়েক দিন আগে উড়োজাহাজের এই ‘বি’ নাটটি ঢিলা (লাল পাইপের) পাওয়া গিয়েছিল; পাশের অয়েল সেন্সর লাইনে (কালো পাইপ) কাজ হয়েছিল তার কয়েক দিন আগে
কয়েকদিন আগে বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটির লুব্রিক‌্যান্ট ট‌্যাংকের পাশের অয়েল-অয়েল হিট এক্সচেইঞ্জার বা অয়েল প্রেসার সেন্সরে ‘ছোটখাটো একটি কাজ’ করা হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

তদন্ত কমিটির এক সদস‌্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেখানে যারা কাজ করেছেন তারা ‘ইচ্ছা বা অনিচ্ছায়’ কিংবা ‘প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে’ ওই নাটটি ধরেছিলেন বা লুজ করেছিলেন। সেটি পরে ঠিক করা হয়েছে কি না, দায়িত্বশীল কোনো ইঞ্জিনিয়ার তা দেখেননি, যদিও সেটি তার দায়িত্ব ছিল।”

সরকার প্রধানের বিমানের এই দুর্ঘটনা নাশকতার চেষ্টা ছিল কি না, তার তদন্ত চলছে বলে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ইতোমধ‌্যে জানিয়েছেন। মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটিতে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার একজন শীর্ষ কর্মকর্তাকেও যুক্ত করা হয়েছে।

হাঙ্গেরি থেকে ফেরার পর সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা নিজের বিমানের সঙ্কট নিয়ে বলেছিলেন, এই দুর্ঘটনা ‘যান্ত্রিক ত্রুটিতেও হতে পারে, আবার মনুষ‌্যসৃষ্ট কারণেও হতে পারে’।

তার চার দিন পর সংসদে এসে সরাসরি মনুষ‌্যসৃষ্ট কারণের কথা বললেন সরকার প্রধান হাসিনা।

তবে এই বিষয়ে এখনি বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি তিনি।

“এটার ওপর তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কিছু বলতে পারি না।”

দশম সংসদের ত্রয়োদশ অধিবেশনের শেষ দিনে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বিমানে ত্রুটির বিষয়টি তোলার পর তা নিয়ে কথা বলেন সংসদ নেতা হাসিনা।

ত্রুটির কারণে জরুরি অবতরণের পর তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাত বিমানবন্দরে বিমানের বোয়িং উড়োজাহাজটি ত্রুটির কারণে জরুরি অবতরণের পর তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাত বিমানবন্দরে বিমানের বোয়িং উড়োজাহাজটি
এই প্রসঙ্গে তিনি কয়েকমাস আগে তিনি ফেরার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে ধাতব বস্তু পড়ে থাকার কথাও বলেন, যেজন‌্য তাকে বহনকারী বিমানটি নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পর অবতরণ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, “এর আগে আমি যখন আসছিলাম রানওয়েতে অনেক ডেব্রিস পড়েছিল। সেখানে বিমান অবতরণ করলে সঙ্গে সঙ্গে উড়েই যেত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পাইলট যথা সময়ে এটা দেখে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। সাথে সাথে এসএসএফ গিয়ে ওই ডেব্রিস সরানোর ব্যবস্থা করেছে।”

এবার মাঝ আকাশে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ার পর বিমান সংশ্লিষ্টরা জরুরি অবতরণের অনুমতি চাইলে সঙ্গে সঙ্গে মত দিয়েছিলেন বলে জানান শেখ হাসিনা।

বিমানে তখন বৈমানিক, প্রকৌশলীসহ ২৯ জন এবং প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীসহ ৯৯ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের সদস্যরাও ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আমার কথা চিন্তা করি না, বিমানে যারা সহযাত্রী ছিলেন, তাদের জন্যই আমার চিন্তা ছিল বেশি। সেখানে আমাদের ব্যবসায়ী মহল থেকে শুরু করে বিমানের ক্রু ও পরিচালনার সাথে জড়িত সকলের জন্য আমার দুঃচিন্তা ছিল।