শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

খালেদাকে জিয়াকে ঘিরে ষড়যন্ত্র, ভেস্তে গেল জনস্রোতে

SONALISOMOY.COM
ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৬

191754_1নিউজ ডেস্ক: ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আগমন উপলক্ষে বিশৃঙ্খলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। কিন্তু বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে এই ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়।
জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে প্রটোকলের দোহাই দিয়ে সাধারণ জনগণের ভিড়ের ফাঁদে ফেলে নাজেহাল করার পরিস্থিতি তৈরির পর পথে দুই দফা বাধাও দেওয়া হয়।
এরপর তিনি বাধা উপেক্ষা শহীদ মিনারে পৌঁছলে তার সঙ্গে থাকা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপর ছাত্রলীগ হামলা চালায়। অন্যদিকে নিরাপত্তার নামে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদেরও বাধা দেয় বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যরা। কিন্তু খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীরা এক সঙ্গে শহীদ মিনারে ফুল দিতে এগিয়ে গেলে সব বাধা ভেস্তে যায়।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করায় দুই যুগের বেশি সময় পর ওই বছর প্রথম সরকারি প্রটোকল ছাড়া রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের পর সাধারণ মানুষের সঙ্গে দলীয় নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিতে বাধ্য হন খালেদা জিয়া।
ওই বছর একুশের প্রথম প্রহরের আগেই তার গুলশানের বাসার সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা করা হয়। ফলে রাত ১২টার পরে তিনি বাসা থেকে বের হন। পরে রাত ১টার দিকে তিনি শহীদ মিনারে প্রবেশের সুযোগ পান।
এরপর নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়ে গত বছরের ৩ জানুয়ারি থেকে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন। এ কারণে তিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসতে পারেননি।

এবার খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন বলে আগেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, রাত সাড়ে ১১টায় গুলশানের বাসভবন থেকে শহীদ মিনারের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।
কিন্তু পুলিশ তাকে রাত ১২টার পরে বাসা থেকে বের হতে বলে এবং রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি শেষে পৌনে ১টার পরে তাকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়।
এদিকে সন্ধ্যারাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ বিএনপি বিরোধী অবস্থান নিতে শুরু করে। শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিশেষ আয়োজনে অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাদেরও আমন্ত্রণ করা হয়, তাদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা পাশ বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু তাদের দাওয়াত করেও না খাইয়ে পথে দাঁড় করিয়ে রাখে পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি আলমগীর কবীর জানান, রাত সোয়া ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরে তাদের আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রফ্রন্টসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের লোকদের বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে গিয়ে অবস্থান নিতে দেওয়া হয়।
তিনি জানান, কেন আমন্ত্রণ জানিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলীকে ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এ অবস্থায় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা রাস্তায় বসে ভাষা শহীদদের জন্য নিবেদিত গান গাইতে থাকেন। তখন পুলিশ ইংরেজিতে গালাগাল করলে ছাত্রদল নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের সরিয়ে শহীদুল্লাহ হলের দিকে নিয়ে যায়।
আলমগীর আরো জানান, ছাত্রদল নেতাদের আকষ্মিক বাধা দেওয়ার ঘটনা থেকে তারা আঁচ করতে পারেন শহীদ মিনারে ফুল দিতে গেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাধার মুখে পড়তে হবে। তাই তাদের সঙ্গে ছাত্রদলের আরো নেতাকর্মী যোগ দেন। এবং দোয়েল চত্বর দিয়ে শহীদ মিনারে প্রবেশ পথের আশেপাশে বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মীও জড়ো হয়। তারা পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের সঙ্গে যোগ দিয়ে শহীদ মিনারে পৌঁছে ফুল দেন।
এদিকে খালেদা জিয়া গুলশানের নিজ কার্যালয় থেকে রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে শহীদ মিনারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান গণমাধ্যমকে জানান, খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের সঙ্গে দুটি বড় বাসে ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ ও কেন্দ্রীয় নেতারা।
গাড়ি বহর রাত ১২টা ৫০ মিনিটে শিক্ষাভবন মোড়ে পৌঁছলে প্রথম বাধা দেয় পুলিশ। সেখানে ১৫ মিনিটেরও বেশি সময় গাড়ি বহর আটকে রাখা হয়। এরপর দোয়েল চত্বরে পুলিশ ফের বাধা দেয়। এ সময় কয়েক হাজার বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মী পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে স্লোগান দিয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গাড়ি বহর নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এগিয়ে যায়।
খালেদা জিয়া রাত ১টা ২০ মিনিটে শহীদ মিনারে পৌঁছান। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ কয়েকজন শিক্ষক বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানাতে এগিয়ে যান। কিন্তু পেছন থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। এতে তারা সামনের দিকে দৌঁড় দেন। এতে অপরাধতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান মাটিতে পড়ে যান।

এ সময় ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-গণসংযোগ বিষয়ক সম্পাদক মামুনুর রশীদ, কবি জসীম উদ্দিন হলের যুগ্ম আহবায়ক ওয়ালিউর রহমান জনি ও শহীদুল্লাহ হলের ছাত্রদল নেতা মাহবুবুল আলম শাহীনসহ বেশ কয়েক জন আহত হন।
এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে থাকা বিএনপির জেষ্ঠ নেতৃবৃন্দসহ নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারে বেদীতে উঠে ফুল দিতে গেলে বিএনসিসি ও স্কাউট সদস্যরা তাদের উপর চড়াও হন। তরুণ স্বেচ্ছাসেবীরা বয়স্ক নেতাদের গায়ে ধাক্কা দিয়ে তাদের বেদী থেকে নামিয়ে দেয়ারও চেষ্টা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ সময় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা স্বেচ্ছাসেবীদের ঘিরে ধরে বেদী থেকে সরিয়ে দেন। তখন কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির চেষ্টা করলেও জনস্রোতের কারণে তারা দৌঁড়ে সরে যেতে বাধ্য হন। এরপর বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারাও খালেদা জিয়ার সঙ্গে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লাঠিপেটা করায় বিএনপির বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান।
তিনি জানান, শহীদ মিনারে যেতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তিন জায়গায় বাধা দেওয়া হয়। এরপর শহীদ মিনারে পৌঁছালে তার সঙ্গে ফুল দিতে যাওয়া নেতাদের আটকানো হয়। আমাদের নেতাদের নাজেহাল করা হয়েছে।উৎসঃ অনলাইন বাংলা