শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

মুসা–তৃষ্ণা দুজনেরই বাড়ি (রাজশাহী) বাগমারায়

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
news-image

বাগমারা প্রতিনিধি: রাজধানীর আশকোনার বাসাটি ইমতিয়াজ পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিলেন মঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা। নব্য জেএমবির কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হওয়ার পর মুসা নব্য জেএমবিকে গোছানোর চেষ্টা করছিলেন। তাঁর সম্পর্কে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানতে পারেন আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর।

এই ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আজিমপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর তানভীর কাদরীর ছেলে ও মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলামের মেয়ে দুজনেই “মুসা আঙ্কেল” নামে একজনের কথা বলেছে। জাহিদুলের মেয়ে আমাদের জানায়, তার মা জেবুন্নাহার শিলা ও ছোট বোন আজিমপুরের বাড়িতেই ছিল। একদিন জেবুন্নাহার শিলা তাদের জানান, তিনি মুসা আঙ্কেলের বাসায় যাচ্ছেন। মুসা আঙ্কেলের স্ত্রীর “বাবু” হবে।’

গুলশান হামলায় এই মুসার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম আশকোনায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গুলশান হামলার আগেই মুসা দলে যোগ দেন। তবে ওই হামলার সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কি না, সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

পুলিশের অপর একটি সূত্র জানায়, আজিমপুরের আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার তানভীর কাদরীর ছেলে জানিয়েছে, উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরে তার বাবা মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম এবং মুসা একসঙ্গে থাকতেন। তাঁরা উত্তরা লাইফ স্কুলের মসজিদে নামাজ পড়তেন ও মাঠে জগিং করতেন। একজন আরেকজনের বাসায় যাতায়াতও করতেন। মুসা তাদের দুই ভাইকে পড়াতেনও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঈনুল ইসলাম ওরফে মুসার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারায়। তিনি উপজেলার গনিপুর ইউনিয়নের বুজরুককোলা গ্রামের আবুল কালাম মোল্লাহর ছেলে। মুসার বাবা আবুল কালাম মোল্লাহ মসজিদের মোয়াজ্জিন ছিলেন। তিনি মারা গেছেন। মুসা গ্রামে খুব কম আসতেন। লোকজনের সঙ্গে তেমন যোগাযোগও ছিল না।

মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা গত শনিবার আশকোনার ওই বাসায় পাঁচ মাস বয়সী সন্তানসহ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃষ্ণার বাড়ি বাগমরার সাঁইপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুস সামাদ। তিনি বাসুপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি। যোগাযোগ করা হলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তৃষ্ণার আটক হওয়ার তথ্য তাঁরা পেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা ঢাকায় এসে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।

এদিকে জানা যায়, বাগমারায় মেধাবী ছাত্র হিসেবে মুসার পরিচিতি ছিল। ঢাকা কলেজে ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করে তিনি উত্তরার লাইফ স্কুলে যোগ দেন। এরপর থেকেই তাঁদের পারিবারিক অবস্থার উন্নতি হয়।

পুলিশ বলছে, উত্তরার লাইফ স্কুলে মেজর (অব.) জাহিদুলের মেয়েও পড়ত। এই স্কুলে আরও একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ছিল। গতকাল রোববার উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের লাইফ স্কুলের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, মুসা এ বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাস পর্যন্ত তাঁদের স্কুলে ইংরেজি পড়াতেন। পরে চাকরি ছেড়ে দেন। মাস দুয়েক আগে পুলিশ স্কুলে এসে মুসার খোঁজখবর নিতে শুরু করে। তবে মুসা কেন চাকরি ছাড়েন, সে বিষয়ে তিনি তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

গতকাল মোবাইল ফোনে মুসার মা সুফিয়া বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ১০ মাস ধরে তাঁর ছেলে ও ছেলের স্ত্রী-সন্তানের কোনো সন্ধান তাঁরা পাননি। মুসার সঙ্গে যোগাযোগও ছিল না। প্রায় এক বছর আগে মুসা বাড়িতে এসেছিলেন বলে তিনি জানান। তবে ছেলে ‘নষ্ট হতে পারেন’—এমন আশঙ্কা বেশ কিছু দিন আগে থেকেই করছিলেন তিনি। শেষবার যখন মুসা যখন বাড়ি আসেন, তখন তাঁর সঙ্গে জিহাদি বই দেখেছিলেন তাঁর পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা।

বাগমারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানান, মুসা পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ছিলেন। এর আগেও তাঁর বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছিল। তবে বাড়িতে না থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।