শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

বরিশালে বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা

SONALISOMOY.COM
জানুয়ারি ৫, ২০১৭
news-image

বরিশাল প্রতিনিধি:

বরিশালে বাধার কারণে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করতে পারেনি বিএনপি। দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করতেও দেওয়া হয়নি তাদের। পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওই কার্যালয় থেকে বের করে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। আর ওই নেতা-কর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান বলে অভিযোগ করা হয়।

এ হামলায় জেলা বিএনপির সভাপতিসহ অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। মারপিটের শিকার হয়েছেন কয়েকজন নারী কাউন্সিলর ও সংবাদকর্মীরা। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আওয়ামী লীগ ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ পালন উপলক্ষে বরিশালে ব্যাপক শোডাউন করে। মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা সদর রোড ও সোহেল চত্বরে জমায়েত হন।
জেলা ও মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবের পালনের জন্য অশ্বিনীকুমার হল–সংলগ্ন জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে জড়ো হন। তাঁরা কালো পতাকা মিছিলের প্রস্তুতি নেন। এ সময় মহানগর পুলিশ এসে কর্মসূচি না করার আহ্বান জানায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের দলীয় কার্যালয় ছাড়ার নির্দেশ দেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশি প্রহরায় বিএনপির একটি দল সদর রোড হয়ে নগরের প্যারারা রোড দিকে যায়। ওই সড়কে ঢুকতেই এলোপাতাড়িভাবে তাদের ওপর হামলা চালান আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা। সেখানে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে মহানগর বিএনপির শিক্ষাবিষয়ক সহসম্পাদক ফারজানা খানম রোজি, মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক ফাতেমাতুজজোহরা মিতু, বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র শরীফ তাসলিমা পলি, সেলিনা বেগম এবং সদস্য পাপিয়া বেগম, মহানগর বিএনপির মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক মো. আজাদ সিকদারকে।

এদিকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার, জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চান, মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জিয়াউদ্দিন সিকদারসহ বিএনপির অন্য একটি দলকে পুলিশ সদর রোডের অনামি লেনের দিকে নিয়ে যান। সেখানেও পুলিশের উপস্থিতিতে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়। তখন মজিবর রহমান সরোয়ার সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হলেও হামলার শিকার হন এবায়দুল হক চান, ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মনিরুজ্জামানসহ বেশ কয়েকজন। এ সময় পুলিশ কাঠের চেলা দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। তাতে বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী গুরুতর আহত হন। আহত সংবাদকর্মীরা হচ্ছে এনটিভির ক্যামেরা পারসন গোবিন্দ হালদার, চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরা পারসন আরিফুর রহমান, আঞ্চলিক দৈনিক শাহনারার ফটোসাংবাদিক আশরাফুল ইসলাম, এম নাদিম মাহমুদ। বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার অভিযোগ করে বলেন, রাজনীতির একটা কালচার থাকবে না? বরিশালে সেটাও নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দেবে না, পুলিশ নিজস্ব কার্যালয়েও থাকতে দেবে না এটা তো হতে পারে না। কার্যালয় থেকে বের করে দিয়ে পুলিশি প্রহরায় হামলা চালানো হয়েছে। এটা ন্যক্কারজনক ঘটনা। পুলিশ উপস্থিত থেকে এই ঘটনাটা ঘটিয়েছে। মহিলারা আগ্রাসনের শিকার হলে রাজনীতি করবে কীভাবে। এ ঘটনায় ১২ জন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চান বলেন, ‘আমরা আমাদের কার্যালয়ে ছিলাম। কোনো মিছিল-মিটিং কিছুই করতে পারিনি। পুলিশ সেখান থেকে বের করে দিয়ে মার খাইয়েছে। তারা নিরাপত্তা দিতে পারবে না, তাহলে কার্যালয় থেকে কেন বের করল। ওই মামলায় আমাদের প্রায় ৫০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।’
এ ব্যাপারে মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. আবদুর রউফ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাড়ে ১১টার দিকে নগরের সদর রোড বিএনপি তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে মিছিলের প্রস্তুতি নিতে থাকে। একই সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও কিছুটা দূরে সদর রোডে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে বিএনপি কার্যালয়ের দিক থেকে একটি বোতল ছুড়ে মারা হয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দিকে। এ সময় সেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছিল। তাই বিএনপি নেতা-কর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে বিএনপি কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেষ্টা করেছি। আমরা কোনো পক্ষের হয়ে কাজ করেছি কথাটা সঠিক নয়। বিএনপির ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন।