শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট নিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ ব্যাংক

SONALISOMOY.COM
ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ৮ নভেম্বর দিবাগত মধ্যরাত থেকে ভারতে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট নিষিদ্ধ করা হয়। এটি মোদি সরকারের অন্যতম বড় সিদ্ধান্ত। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে বাতিল হওয়া নোট বদলের সুযোগ রয়েছে। এ নিয়ম ভারতে বসবাসকারী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের কাছেও ৫০ কোটি রুপির সমপরিমাণ ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট আছে। এখন এ নোটগুলোর কী হবে?
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) গভর্নরের কাছে এ বিষয়ে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে তিনি এ নোটগুলো ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁর (আরবিআই গভর্নর) ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি রুপির সমপরিমাণ ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট আছে বলে ওই চিঠিতে জানানো হয়।
এছাড়া এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরবিআই–কে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের চিঠি অনুযায়ী, বিভিন্ন সময়ে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর ব্যবহারকারী যাত্রীর কাছ থেকে অবৈধভাবে বহন করা রুপি জব্দ করেছে শুল্ক কর্তৃপক্ষ, যা পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ট্রেজারিতে জমা হয়।
অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানের বর্ডার হাটে রুপিতে লেনদেন করা যায়। বর্ডার হাটে অস্থায়ীভাবে বসানো স্থানীয় সোনালী ব্যাংক শাখার বুথ থেকে রুপি জমা দিয়ে টাকা নেন স্থানীয় অধিবাসী ও বিক্রেতারা। এভাবে সোনালী ব্যাংকের কাছে ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোটও সোনালী ব্যাংকের হাতে এসে পড়েছে। এমন প্রায় ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ রুপি এখন সোনালী ব্যাংকের হাতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের চিঠি দেওয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের কাছে থাকা রুপিগুলো সম্পর্কে আরবিআই কলকাতা কার্যালয়ে তথ্য জানিয়েছে কলকাতায় অবস্থিত সোনালী ব্যাংক শাখা।
গভর্নর ফজলে কবির চিঠিতে আরও লিখেছেন, ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট নিষিদ্ধ করায় ভারতীয় অর্থনীতিকে আরও ভালো কাঠামোতে দাঁড়াতে সহায়তা করবে এটা। তবে এ সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত বাণিজ্য ও বাংলাদেশি ভ্রমণপিপাসুদের কিছুটা অসুবিধায় ফেলছে; যা দ্রুত নিরসন করা প্রয়োজন।
গত ৮ নভেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতির উদ্দেশে এক ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট নিষিদ্ধ করেন। অর্থনীতিকে নতুন কাঠামোতে দাঁড় করাতেই তিনি এ উদ্যোগ নেন। এ নোট নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষাপট হিসেবে ভাষণে নরেন্দ্র মোদি বলেন, সন্ত্রাস-দুর্নীতির কারণে দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দুর্নীতি ও কালোটাকা দেশে গভীর শেকড় গেড়ে বসেছে। বৈশ্বিক দুর্নীতি সূচকে ভারতের অবস্থান ওপরের দিকে। এসব কাজে সমাজের নির্দিষ্ট কিছু অংশের লোক জড়িত। এ ছাড়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের উদ্দেশ্যে সীমান্তের ওপার থেকে (পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান) জাল নোট আসছে।
এ ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন রাজ্যে নোট বদলে নেওয়ার হিড়িক পড়ে। তবে দৈনিক সর্বোচ্চ ১০ হাজার রুপি বদলে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এতে অনেক ক্ষেত্রে অর্থসংকটে পড়েন অনেক ভারতীয়। এমনকি বাংলাদেশি পর্যটক ও চিকিৎসার জন্য দেশটিতে গমনকারীরা বিপাকে পড়েন।
এর আগে মোদি সরকার ক্ষমতায় এসে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছিল। এ সুযোগ নিয়ে সোয়া লাখ কোটি রুপির সমপরিমাণ কালো টাকা সাদা হয়।
ভারতে কালোটাকা ধরতে এ উদ্যোগ প্রথম হলেও বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালে এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় ১০০ টাকার নোট লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার। তখন ১০০ টাকার নোটই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মুদ্রা। ওই সময় অর্থমন্ত্রী ছিলেন এ আর মল্লিক।