সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪

চাকরির কথা বলে ৭ আগস্ট ঢাকায় আসে সাইফুল

SONALISOMOY.COM
আগস্ট ১৫, ২০১৭
news-image

চাকরির কথা বলে গত ৭ আগস্ট খুলনার ডুমুরিয়া থেকে ঢাকায় আসে পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে আত্মঘাতী হওয়া জঙ্গি সাইফুল ইসলাম। ঢাকায় এসে বিভিন্নস্থানে থাকার পর সর্বশেষ সে হোটেল ওলিও’র পুরনো ভবনে অবস্থান নেয় বলে জানান কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। অভিযান শেষে তিনি এসব তথ্য জানান।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নিহত জঙ্গির নাম সাইফুল ইসলাম। সে খুলনার বিএল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ৭ আগস্ট চাকরির কথা বলে সে ঢাকায় চলে আসে। এরপর বিভিন্নস্থানে থাকার পর সে এই হোটেলে অবস্থান নেয়।’

সিটিটিসি প্রধান বলেন, জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে প্রচুর জনসমাগম হয়ে থাকে। নব্য জেএমবি’র একটা সেল বড় নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। সেই প্রক্রিয়ার অস্পষ্ট গোয়েন্দা তথ্য পাচ্ছিলাম। তারা মরিয়া হয়ে ওঠে একটা হামলার জন্য। নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য।

তিনি বলেন, গতকাল (সোমবার) আমরা নিশ্চিত হই, ৩২ নম্বর টার্গেট হলে তারা আশেপাশে অবস্থান নেওয়ার কথা। তিনটি রাস্তার পাশাপাশি পান্থপথকে খুব গুরুত্ব সহকারে চিহ্নিত করি। বিশ্বস্ত সূত্র, তথ্য ও প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হই, পান্থপথ ও আশপাশে এক বা একাধিক ব্যক্তি অবস্থান নিয়েছে।পরশুদিন থেকে ব্লকরেইড শুরু হয়। গতকাল একটা পর্যায়ে নিশ্চিত হই,তারা কোনও আবাসিক হোটেল বা মেসে অবস্থান নিয়েছে।এরপর শুরু হয় দ্বিতীয়বারের মতো ব্লকরেইড।

রেইড চলাকালে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালের সব কক্ষ নক করার সঙ্গে সঙ্গে খুললেও সাইফুল তার কক্ষটি খোলেনি বলে জানান মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, হোটেলের অন্যান্য কক্ষে নক করার সঙ্গে সঙ্গে (গেস্টরা) খুলে দেয়। কিন্তু একটি কক্ষ নক করার পর খোলেনি। হোটেলের কর্নারের ৩০১ নম্বর কক্ষে নক করার পর ভেতর থেকে জানায়, ‘সকালের আগে খুলবো না।’ করিডোরের পাশে জানালা দিয়ে ব্যাগ ও পা দেখতে পান পুলিশ সদস্যরা। তখন ব্লক রেইডে অংশ নেওয়া পুলিশ সদস্যরা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে দরজার বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে দেন। যাতে (ভেতরে থাকা ব্যক্তি) পালাতে না পারে।

সাইফুলকে বারবার আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হলেও সে আত্মসমর্পন করেনি বলে জানান সিটিটিসি প্রধান। তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি আগে থেকে নেওয়া ছিল। খুব দ্রুত সময়ে সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোসাল ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সকালে (বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে) শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ চলাকালে তাকে আত্মসমর্পন করার কথা বলি। কিন্তু  আমাদের আহ্বানে সাড়া না দেওয়ায়, আমরা অভিযানের সিদ্ধান্ত নেই। সোয়াটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনাকারী সদস্যরা গুলি করতে করতে রুমের সামনে চলে যান। তখন একটা বিস্ফোরণ ঘটায়। গুলি ও বিস্ফোরণে দরজা ভেঙে যায়। তখন সে (সাইফুল) বিস্ফোরকসহ বাইরে বেরিয়ে আসে। সেটি ফাটানোর চেষ্টা করে। তখন সোয়াট সদস্যরা গুলি চালায়। গুলির পাশাপাশি বোমাটি ফাটানো হয়। রুমের দেয়াল ও বেলকনির দেয়ালও ভেঙে পড়েছে। শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। বোমাগুলো ট্রাভেল ব্যাগে আনা হয়েছিল । আত্মঘাতী সাইফুলের সঙ্গে তিনটি বোমা ছিল। প্রথমটা দরজা ভাঙার সময় বিস্ফোরিত হয়, দ্বিতীয়টি সে নিজে ফাটায় ও তৃতীয়টি বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট নিষ্ক্রিয় করে বলে জানান মনিরুল ইসলাম।

বত্রিশ নম্বরে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানাতে আসা মিছিলে ঢুকে ভিড় দেখে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে প্রচুর লোক হতাহত করার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শিরোনাম করে নিজের অবস্থান জানান দিতে চেয়েছিল। তাদের রিক্রুটমেন্ট অনেক কম। এই হামলার মাধ্যমে রিক্রুটমেন্ট বাড়ানোর টার্গেট ছিল বলে মন্তব্য করেন সিটিটিসি প্রধান।