মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

বিশেষ সাক্ষাতকারে সৈয়দ আলমাস কবির
তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থ সহয়াতা পেতে সহযোগীতা করবে বেসিস

SONALISOMOY.COM
এপ্রিল ২, ২০১৮
news-image

সোনালী সময় প্রতিবেদক: আমার ৩ মাসের কাজের মূল্যায়ন করে সদস্যরা আমাকে ফের জয়ী করেছেন এটা সত্যিই ভালোবাসা। আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রি সরকার থেকে ভালো একটা ফোকাসে আছে। তরুন বা নতুনদের জন্য ভালো একটা বিজনেস প্লান তৈরী করতে হবে। টাকা আছে নেমে পড়লাম ব্যবসা করতে, পরে কি হবে তা জানা নেই, তাহলে তো বিপদজনক হবে। প্রয়োজনে সদস্যদের জন্য ফিনানসিয়াল সাপোর্টের ব্যবস্থাও করবে বেসিস। এছাড়া অতীতের কোন আর্থিক অনিয়ম হলে অভিযোগ সাপেক্ষে তদন্ত করবো। সোনালী সময়কে একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসে-বেসিস এর নব নির্বাচিত সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির।

সোনালী সময় : বিশাল জয়ে কেমন লাগছে?

সৈয়দ আলমাস কবীর : আসলে জয়ের তো সব সময় একটা আনন্দ আছেই। যেখানে জয়ের সাথে আনন্দটা জড়িত। তবে, এবারের জয়টা একটু বেশী স্পেশাল। যেহেতু এবারের বেসিসের নির্বাচন গত ২০ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নির্বাচন। এবং ৩টি প্যানেল যা আগে কখনও দেখা যায়নি। তবুও জয়। সত্যিই আমি মুগ্ধ।  বেসিস নির্বাচনে ৮০ ভাগ ভোট পরেছে অতিতের চেয়ে বেড়েছে ভোটার সংখ্যাও তবুও আমাদের সকল মেম্বাররা সচেতনতার প্রমাণ রেখেছে। যাকে বলে গণতন্ত্রচর্চা।

আরেকটি ব্যাপার তা হলো আমাদের নির্বাচনী পরিবেশটাও ছিল খুব মনোরম। এটা খুব ভালো লেগেছিল।

তাছাড়া আমি যেহেতু বর্তমান বেসিস সভাপতি ছিলাম তাই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া বা ঠিক সময়ে নির্বাচন দেয়া কিছুটা হলেও আমার উপর বর্তায়। আমি মনে করি সেখানে জয়ী হয়েছি। নির্বাচনে সর্বসংখ্যক ভোট পেয়েছি এখানে একটা সেটিসফেকশন, আমার গত ৩ মাসের কাজের মূল্যায়ন করে সদস্যরা আমাকে ফের জয়ী করেছেন এটা সত্যিই ভালোবাসা।

সোনালী সময় : প্রথম কোন কাজটি করতে চান?

সৈয়দ আলমাস কবীর : আমি অলরেডি গ্রথ ইকো সিস্টেম নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি, তা আপনারাও জানেন। আমাদের দেশে গ্রথ ইকো সিস্টেম খুব প্রয়োজন। কেননা, আমাদের আইটি প্রতিষ্ঠানগুলো খুব ছোট বা নতুন কোম্পানী। এই ছোট বা নতুন কোম্পানীকে যদি আমরা বেসিস থেকে সাপোর্ট দিতে পারি তাদের ব্যবসা পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাহলে আমার মনে হয় যে তারা এই ব্যবসার সাপোর্ট সিস্টেম নিয়ে তাদের ব্যবসাকে প্রসারিত করতে পারবে। এবং তাদের বড় হওয়া মানে কিন্তু আইসিটি বড় হওয়া বা ইন্ড্রাস্টির আয়তন বড় হওয়া। সো আমার সেটাই করার ইচ্ছে এবং এই গ্রথ ইকো সিস্টেম নিয়ে যে আমি কথা বলে আসছিলাম এটা খুব দ্রুত করতে চাই। আগামী দু’কোয়াটার এর মধ্যে করতে চাই। যত দেরি হবে আমরা ততই পিছিয়ে পড়বো। যাতে করে আমাদের মেম্বাররা এর বেনিফিট নিতে পারে। পাশাপাশি যেটা করতে চাই লোকাল যে দেশীয় কোম্পানী আছে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের কাজটা শুরু করতে চাই।

সোনালী সময় : বাংলাদেশের সফটওয়ার সেক্টরের সমস্যা কী? এবং উত্তরণের উপায়?

সৈয়দ আলমাস কবীর : বাংলাদেশ সফটওয়্যার সেক্টরে অনেকগুলো সমস্যা আছে, যাদের মধ্যে প্রথমেই আসে দক্ষ জনবলের অভাব। আমাদের দক্ষ জনবল তৈরী হচ্ছে কিন্তু, যে হারে বাড়তে চাই সে হারে আমাদের দক্ষ জনবল এখনও গড়ে ওঠেনি। তা আমাদের তৈরী করতে হবে খুব দ্রুত।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে অর্থিক, যে কোন ব্যবসা করতে একটা অর্থের প্রয়োজন হয়। ইনভেস্টমেন্ট বা ব্যাংক লোন প্রয়োজন পরে। সেখানে জামানত হিসেবে বাড়ি-ঘর দেয়ার মত অবস্থা আমাদের আনেক কোম্পানীরি থাকেন। এই অর্থায়নের বিষয়টি আরও স্মুথ করতে হবে। ইতি মধ্যে আমরা এবিষয়েও পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি এবং বাস্তবায়নের পথে।

অরেকটি সমস্যা হলো, আমাদের কোম্পানীগুলোর ইমেজটাকে আরও বাড়াতে হবে। অর্থাৎ ব্রান্ডিংটা ভালো করে করতে হবে। বিদেশে তো বটেই লোকাল যারা ইউজার বা ক্রেতা আছে তাদের মধ্যে অনাস্থা বিরাজ করছে। ব্রান্ডিং বলতে শুধু চাকচিক্য না।

ক্রেতাদের আস্থা বাড়াতে যে স্টেপ নেয়া প্রয়োজন। আমি তাদের বলবো কোন কোম্পানী যদি সফটওয়্যার কিনে তাহলে যেনো বিদেশী সফটওয়্যার না কিনে দেশীয় সফটওয়্যারই কিনে। তারা অনেকসময় ভয় পায় আসলে কি দেশীয় সফটওয়্যার কিনবো। এটা কি চলবে না চলবে না? আমি কি পরে আফটার সেল সাপোর্ট পাবো কি পাবো না! এই যে অনাস্থা এইটা একটা বড় সমস্যা।

আমি তাদের বলবো দেশের অনেক সফটওয়্যার বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে কিন্তু দেশের কোম্পানীগুলো তা ক্রয় করছেনা। এখন আমাদের করণীয় হলো, যে সফটওয়্যারগুলো বিদেশে সুনাম কুড়ায় সে তথ্যগুলো দেশিও গন মাধ্যেমে প্রচার করতে হবে। পজেটিভ সংবাদগুলো প্রচার করতে হবে। সফলতার যে গল্প তা সবাইকে জানাতে হবে। জানালেই সবাই কিন্তু আশস্ত হবে এবং আস্থা জন্মাবে।

সোনালী সময় : বেসিসের উচ্চ নেতৃত্বে ছিলেন, বেসিসের সমস্যা কি এবং সমাধান কি?

সৈয়দ আলমাস কবীর : যে কোন অর্গানাইজেশনেরইতো ভালো বা মন্দ দিক থাকবেই এটাই স্বাভাবিক। বেসিসের প্রধান সমস্যা হলো আমাদের বেসিসে রিচার্স সেলটা খুব উইক। মার্কেট সম্পকে যদি আমার কাছে কোন ডেটা চান তাহলে সঠিক ডেটা টা বলা আমার জন্য খুব ডিফিকাল্ট। কারণ, আমাদের তেমন রিচার্ডস সেল নেই। এটা যে কোন ইন্ড্রাষ্টির জন্য খুব ইমপটেন্ট। আরেকটা হলো মেম্বারদের জন্য সার্ভিসগুলো আরেকটু সহজলভ্য করা দরকার। যেমন. একজন মেম্বার যদি বেসিস থেকে কোন সাপোর্ট চান তাহলে সেটা যেনো আরও স্মুথলি সাপোর্ট সার্ভিস দেয়া যায় সে বিষয়টা মাথায় রাখছি।

সোনালী সময় : অতিতের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারীর অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোর তদন্ত করবেন কি না?

সৈয়দ আলমাস কবীর : অবশ্যই। যেহেতু নতুন বর্ড হবে। আগের বর্ডের সব হিসাব এই নতুন বর্ডের কাছে জমা দিতে হবে। আমরা একটি অডিট করছি, সেখানের হিসেব কমপ্লিট করে নতুন কমেটির কাছে জমা দিয়ে দিব। তার পরে বোর্ড দেখবে কি করা যায়। যেহেতু এখনও অডিটটা জমা পরেনি তাই এবিষয়ে এখন কিছু বলতে চাইনা।

আর অতিতের আর্থিক অনিয়মের বিষয় নিয়ে কেউ যদি সুনিদির্ষ্ট অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে বোর্ড বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিবে।

সোনালী সময় : নতুন সভাপতি হিসেবে নতুনদের উদ্দ্যেশে কিছু বলুন।

সৈয়দ আলমাস কবীর : আমাদের আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রির দিকে সরকার থেকে ভালো একটা ফোকাস আছে। ওভারঅল এখন এখানে সবাই ইনভেষ্ট করতে চাচ্ছে। তরুন বা নতুনদের জন্য তো অবশ্যই এটা ভালো সুযোগ তবে, তাদের উদ্দ্যেশে একটা কথা বলবো তা হলো শুধু বিজনেস আইডয়া থাকলেই চলবেনা। তাদের ভালো একটা বিজনেস প্লান তৈরী করতে হবে।

টাকা আছে নেমে পরলাম ব্যবসা করতে, পরে কি হবে তা জানা নেই, তাহলে তো বিপদজনক হয়ে পরবে। আর আমাদের যুব সমাজ বা তরুণরা এখন এই ভুলটাই বেশী করছে। আমি তরুণদের উদ্দ্যেশে জোড় দিয়ে বলতে চাই বিজনেস প্লান করে তারপর ব্যবসায় নামুন। এ বিষয়ে যদি মনে করেন বেসিসের কোন সহযোগীতা প্রয়োজন তাহলে আসুন। উদ্যোক্তাদের অর্থ সহয়াতা পেতে পাশে দাড়িয়ে সহযোগীতা করবে বেসিস।