বুধবার, ১ মে, ২০২৪

বাগমারার গোয়ালকান্দির দুই নেতার মাদক কেলেঙ্কারী নিয়ে বিব্রত আওয়ামী লীগ

SONALISOMOY.COM
জুলাই ৪, ২০২১
news-image

প্রতিনিধি, বাগমারা, রাজশাহী: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুই নেতার মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন নেতারা। এক নেতার ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার ও আরেকজনের ফেনসিডিল সেবনের ভিডিও ভাইরাল হয়। একই দিনে এসব ঘটনা ঘটে। দলীয় ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন নেতার।

এর মধ্যে দলের ইউনিয়ন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও নয় নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাহাবুর রহমান সরকারের ফেনসিডিল সেবনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যায় এবং চারসহযোগি নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি সজল সরকার।

গত সোমবার (২৮ জুন) দিবাগত রাতে ১৪ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিলসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সজল সরকার (৩৫)। তিনি ইউনিয়নের রামরামা গ্রামের রমজান আলীর ছেলে। এসময় তাঁর অপর চারসহযোগিকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরের দিন মঙ্গলবার তাঁদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়েরের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে একই দিনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুর রহমান সরকারের একজন মাদক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ফেনসিডিল সেবনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আগর আলী নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এক মিনিট ৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায় সাঁকোয়া গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী (২২ জুন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গাঁজাসহ গ্রেপ্তার) মাহাবুর রহমানের বাড়িতে তিনি ফেনসিডিল পান করছেন। ফেনসিডিলের বোতল হাতে নিয়ে বাড়ির বারান্দায় থাকা একটি কাঠের চৌকিতে বসে পান করছেন। মাদক ব্যবসায়ী আরেকটি বোতল নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে দেন এবং নিজেও সেবন করেন।

ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুর রহমান সরকারকে মাদকাসক্ত উল্লেখ করে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার ও গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। তিনি ক্ষমতার দাপটে বাগমারাকে মাদকের আখড়ায় পরিনত করেছেন বলে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত সোমবার (২৮ জুন) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয় ভিডিওটি। এছাড়াও মেসেনজার, ইমো ও হোয়াটঅ্যাপের মাধ্যমেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মাদক সেবনের এই ভিডিওটি। পরে ভাইরাল হয়ে পড়ে মাদক সেবনের এই ভিডিওটি। অনেকে মন্তব্য করে তাঁর গ্রেপ্তার ও দলীয় ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা এমন ব্যক্তিকে দলীয় পদ দেওয়া এবং সদস্য নির্বাচিত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এদিকে ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর এটাকে সম্পাদনা করে ছাড়ার অভিযোগ এনে পাল্টা স্ট্যাটাস দেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুর রহমান সরকার। তিনি স্ট্যাটাসে দাবি করেন রাজনৈতিক ইমেজ নষ্ট করার জন্য ভিডিওটি ফেক আইডি থেকে ছড়ানো হয়েছে। এই বিষয়ে মুঠোফোনে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, তিনি সাঁকোয়াতে ওই বাড়িতে একজনের সঙ্গে গিয়েছিলেন। তাঁর সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য এমন করা হয়েছে দাবি করেন। তাহলে তিনি কোনো ব্যবস্থা নিবেন বা উদ্যোগ নিয়েছেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, দলীয় নেতা ও প্রশাসনের লোকজনের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে। তাঁরা বারণ করার কারণে আপাতত আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।

এদিকে দলীয় নেতাদের মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া ও এসব সংবাদ গণমাধ্যমে আসাতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন নেতারা। গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বকুল হোসেন খরাদি বলেন, দুই নেতার ঘটনাটি তাঁদের নজরে এসেছে। তাঁদের এমন ঘটনায় রীতিমত বিব্রত। এতে দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। এই বিষয়ে দলীয় সভায় আলোচনা করে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চারজন নেতা বলেন, তাঁরা দুজনই মাদকাসক্ত। প্রভাব খাটিয়ে দলে ঢুকেছেন তাঁরা। এসব মাদকাসক্তদের নিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। কিছু করতে পারা যাচ্ছে না।

উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলাম বলেন, বিষয় দুইটি তাঁদের নজরে এসেছে। তিনিও বিব্রত বলে মন্তব্য করেন।