শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

দাম না থাকায় বিপাকে পান চাষিরা

SONALISOMOY.COM
জুলাই ১৯, ২০২১
news-image

বাগমারা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারায় করোনা কালে পান হাটে কেনাবেচা কমে গেছে। পানের বাজারে বাইরের বেপারী (ক্রেতা) না আসায় ভালো দামে পান বিক্রি করতে না পেরে হতাশায় পড়েছে চাষিরা।

দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতির সাথে সাথে পান চাষের উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিতে পেয়েছে। এতে টিকতে পারছেন না পান চাষিরা। ফলে দীর্ঘ দিনের বহুল প্রচলিত ঐতিহ্যবাহী বাগমারার মিষ্টি পান চাষ এখন হুমকিতে। সরকারি ভাবে পান চাষিদের সহায়তা না করা হলে পান চাষ ধ্বংসের সম্মুখীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পান চাষে অধিক লাভ হওয়ায় এলাকার কৃষকরা পান চাষে বেশি আগ্রহী। বাগমারায় ৯৬০ হেক্টর জমিতে রয়েছে পান বরজ। অন্য আবাদের চেয়ে পান বরজে তুলনা মূলক লাভ বেশি হওয়ায় এলাকার কৃষকরা পান চাষে ঝুঁকেছেন। বাগমারার পান দেশের চাহিদা মিটিয়ে বহির্বিশ্বে রফতানি হয়ে থাকে।

এই এলাকার পান মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ার কারণে দেশে-বিদেশে কদরও বেশ ভালো। উপজেলার পান কেনা-বেচার রয়েছে বেশ কয়েকটি হাট। এর মধ্যে মচমইল, তাহেরপুর, মাদারীগঞ্জ, মোহনগঞ্জ, একডালা, বাগমারা, দ্বীপনগর, খালগ্রাম উল্লেখ যোগ্য। রাজশাহীর অন্যতম পানের হাট মচমইল এই হাটে সপ্তাহে দুই দিন বসে পানের হাট। এখান থেকে ৪০-৪৫টি ট্্রাক পান দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে বলে জানান পানচাষিরা। বর্তমানে করোনার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসছেন না। ফলে হাটে ক্রেতা শুণ্য হয়ে পড়েছে।

সোমবার মচমইল পানের হাটে গিয়ে দেখা গেছে পানের প্রচুর সরবরাহ। পান ব্যবসায়ীরা ঢিলে-ঢালাভাবে পান কেনা-বেচা করছেন। মহামারির কারণে পান বাইরে নেওয়ার ব্যবস্থা বঞ্চিত পানচাষিরা পানের সঠিক দাম না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন।

খুতার (ছোট গাদি) দামে বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে বড় গাদি (এক পোয়া পান)। তিন ভাগের এক ভাবে নেমে এসেছে পানের দাম। প্রতি হাট বারে যেটুকু জায়গায় হাট বসতো সোমবার এর তিন গুণ স্থান নিয়ে বসেছে পানের হাট। লোক সমাগমে মূখরিত ছিল হাটের প্রতিটি স্থান। তবে স্বাস্থ্যবিধি, মাস্ক কিংবা সামাজিক দূরত্ব সবই ছিল উপেক্ষিত। পান বিক্রি করতে আসা মাধাইমুড়ি গ্রামের এমরান হোসেন জানান, পান চাষ করতে যে টাকা ব্যয় হচ্ছে পান বিক্রি করে তার অর্ধেকও পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান, একটি লোক নিয়ে দুই পোয়া পান ভেঙে হাটে বিক্রি করে দাম পাওয়া যায় মাত্র ১২০০ টাকা, অথচ সেই লোকের বর্তমান মজুরি দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। এদিকে সবচেয়ে বড় পানের দাম ১৫০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকা পোয়া। মাজারী সাইজের টা ৮০০ থেকে ১০০০ হাজার পোয়া। শাপটা পান ২ থেকে ৩ টাকা বিড়া। যে মোটা পানের দাম ছিল ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা পোয়া।

পানের দাম কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে মচমইল হাটের পান ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলাম জানান, আগে মধ্যপ্রাচ্যে প্রচুর পানের চাহিদা ছিল। এখন করোনার কারণে কোনো পান বাইরে যাচ্ছে না। এতে পানের গুরুত্ব¡ কমে গেছে। হাটে আসা পানচাষিরা জানান, নিত্যপণ্যের মূল্য উর্দ্ধগতি। এছাড়া পান চাষের উপকরণ, যেমন পান বরজে ব্যবহৃত লগড়, ছুচ, ছায়ন, বাতা, খড়, উলা ও উয়াশির প্রচুর পরিমাণ দাম বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় পানের দাম খুবই কম থাকায় তারা হতাশায় পড়েছেন।

মচমইল পান হাটের ইজারাদার আব্দুল মমিন বলেন, প্রতি হাটে কয়েক কোটি টাকার পান কেনাবেচা হয় এই হাটে। উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ পানের হাট মচমইল। এখানে সপ্তাহে দুই দিন পানের হাট বসে। এছাড়াও অন্য দুইদিন বসে অন্য হাট। মোট চারদিন মচমইলে হাট বসে। বর্তমানে পানের দাম না থাকায় লোকসানের মুখে পড়েছে চাষিরা। একদিকে করোনা অন্যদিকে পান বরজের উপকরণাদীর মূল্যবৃদ্ধি। রাজশাহীর পান মিষ্টি স্বাদের হওয়ার এর চাহিদা অনেক। পান চাষিরা সরকারী ভাবে সহযোগিতা পেলে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।