মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

ছয় জেলায় ২৪ ঘণ্টায় ৮৭ জনের মৃত্যু

SONALISOMOY.COM
জুলাই ২৯, ২০২১
news-image

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহী, খুলনা, কুষ্টিয়া, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও চাঁদপুরে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭ জন, খুলনার তিন হাসপাতালে ১৬, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ১১ জন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৬ জন, চট্টগ্রামে ১৭ জন ও চাঁদপুরে ১০ জন মারা যান। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্টে-

রাজশাহী থেকে জানান, করোনা ভাইরাসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন ও উপসর্গে ১২ জন মারা গেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং বলেন, ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১৭ জনের মধ্যে রাজশাহী জেলার চারজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন, নাটোরের তিনজন, নওগাঁর একজন, বগুড়ার একজন, পাবনার পাঁচজন ও কুষ্টিয়ার দুইজন। এদের মধ্যে করোনা সংক্রমণে মারা গেছেন রাজশাহীর একজন, নাটোরের একজন, বগুড়ার একজন ও পাবনার দুইজন।

অন্যদিকে উপসর্গে মারা গেছেন রাজশাহীর তিনজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন, নাটোরের দুইজন, নওগাঁর একজন, কুষ্টিয়ার দুইজন ও পাবনার তিনজন। সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রামেক পরিচালক জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেকে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৫২ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩২ জন। রামেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে ২০৬ জন এবং সন্দেহভাজন ও উপসর্গ নিয়ে ২৯৫ জন ভর্তি রয়েছেন।

গত ২৪ ঘণ্টায় রামেকে ৫১৩টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিলেন ৪১৫ জন।

খুলনা থেকে জানান, খুলনার চার হাসপাতালে গেল ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৮শে জুলাই বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ২৯শে জুলাই বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।

খুলনা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে সাতজন, শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের করোনা ইউনিটে তিনজন, খুলনা জেনারেল হাসপাতালে একজন, গাজী মেডিকেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

খুলনা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের ফোকাল পার্সন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১২৬ জন। তাদের মধ্যে রেড জোনে ৪৬ জন, ইয়ালো জোনে ৪৮ জন, আইসিইউতে ১৯ জন এবং এইচডিইউতে ১৩ জন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ২৬ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২১ জন।

খুলনার শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. প্রকাশ দেবনাথ জানান, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন ৪২ জন। তাদের মধ্যে আইসিইউতে রয়েছে ১০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭ জন রোগী ভর্তি হয়। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩ জন।

খুলনা জেনারেল হাসপাতালের ৮০ শয্যার করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. কাজী আবু রাশেদ জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪০ জন। এর মধ্যে ২০ জন পুরুষ ও ২০ জন মহিলা। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৯ জন, আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮ জন।

খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। হাসপাতালের ৯০ শয্যার করোনা ইউনিটে ৬১ জন ভর্তি রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন ৫ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯ জন। আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন ১০ জন এবং এইচডিইউতে ৩ জন।

গাজী মেডিকেল হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডা. গাজী মিজানুর রহমান জানান, হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৭৫ জন। ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছেন ১৯ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২ জন। আইসিইউতে ৮ জন ও এইচডিইউতে ৯ জন রয়েছেন।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়া করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে আরো ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে নয় জনের করোনা পজেটিভ ও দুই জনের করোনা উপসর্গ ছিল। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫২২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪৯ জনের নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৮.৫৪ শতাংশ।

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত তথ্যে আরও জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে ১৫১ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী ও ৫০ জন উপসর্গ নিয়ে মোট ২০১ জন ভর্তি রয়েছে।

কুষ্টিয়ায় বুধবার দিনভর অভিযান চালিয়ে সরকারী বিধিনিষেধ অমান্যকারী ১৪৩ জনের কাছ থেকে ৭৭ হাজার ২শ’ টাকা জরিমানা আদায় এবং দুই জনকে কারাদ- দিয়েছে জেলা প্রশাসনের সম্বন্বয়ে গঠিত ভ্রাম্যমান আদালত।

চট্টগ্রাম থেকে জানান, চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৯৪৯। একই সময়ে শনাক্ত হয়েছেন এক হাজার ৩১৫ জন। এর মধ্য দিয়ে জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৯ হাজার ৭৫১ জনে।

আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি জানান, বুধবার চট্টগ্রামের বিভিন্ন ল্যাবে তিন হাজার ৫১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে এক হাজার ৩১৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে নগরের ৮৫৮ জন এবং উপজেলার ৪৫৭ জন।

ময়মনয়সিহ থেকে জানান, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন জন করোনা শনাক্ত হয়ে এবং ১৩ জন উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. মহিউদ্দিন খান মুন। তিনি জানান, বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ইউনিটটিতে করোনায় মারা গেছেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার আবদুল হামিদ (৬০), নেত্রকোনা সদরের এমদাদুল হক (৮৫) ও শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার আমিরউদ্দিন (৯০)।

এ ছাড়া ওই সময়ের মধ্যে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান ময়মনসিংহ সদরের নজরুল ইসলাম (৬২), গোলাপ আলী (৫৫), দুলু মিয়া (৩০), সাবু খাতুন (৮৫), হোসনে আরা (২৫), গফরগাঁও উপজেলার সুরাইয়া খাতুন (৬৫), হালুয়াঘাটের খোকন মিয়া (৫৫), ত্রিশালের পারভিন আক্তার (৪৫), শেরপুর সদরের সাজেদা বেগম (৫৫), মনোয়ারা বেগম (৬৫), টাঙ্গাইল সদরের পরিমল চন্দ্র (৫২), ধনবাড়ির সৌরভ (১৩) ও নেত্রকোনার সুজিত চন্দ্র দাস (৬০)।
ডা. মহিউদ্দিন খান মুন জানান, করোনা ইউনিটে বর্তমানে ৪৫৩ জন রোগী ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে আইসিইউতে রয়েছেন ২০ জন রোগী। নতুন ভর্তি হয়েছেন ৮৩ জন ও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৩ জন।

এদিকে ময়মনসিংহ জেলায় এক দিনে করোনা শনাক্তে এযাবৎকালের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৬৬০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৪৫৮ জনের শরীরে করোনার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

যেখানে শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম।

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুর সরকারি সদর হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন এবং বাকী পাঁচ জন করোনার উপসর্গে ভুগছিলেন। সদর হাসপাতালের করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল এ তথ্য জানান।

অপরদিকে, চাঁদপুরে এবার একদিনে সর্বোচ্চ ৪৯৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। চাঁদপুরে করোনা রোগী শনাক্তের পর গত দেড় বছরের মধ্যে এটি একদিনে সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের ঘটনা। মোট নমুনার সংখ্যা ছিল ১০৪৫টি, নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে এটি দেড় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। নমুনা অনুপাতে আক্রান্ত শনাক্তের হার ৪৭.৬৫ শতাংশ। চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় এসব নমুনা সংগৃহীত হয়।